বেদবিদ্যা-জ্ঞানরাজ্যের তালা খুলতে, বেদাঙ্গরূপ ছয়টি চাবির প্রয়োজন

সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ ছাড়াও প্রত্যেক বেদের সাথে যুক্ত আরও চার প্রকারের সূত্র আছে তাদের বলা হয় 'কল্পসূত্র'। সায়ণাচার্য তাঁর ঋগ্বেদের ভাষ্যোপক্রমণিকায় বলেছেন, ‘কল্প্যতে সমর্থ্যতে যাগ প্রয়োগোঽত্রইতি’। অর্থাৎ যার দ্বারা যাগযজ্ঞাদি কল্পিত বা সমর্থিত হয় তাকে কল্প বলে। এ প্রসঙ্গে বৃত্তিকার বিষ্ণুমিত্রের মতটি স্মর্তব্য। তিনি বলেছেন, ‘কল্পো বেদ বিহিতানাং কর্মনামানুপূর্ব্যেণ কল্পনা শাস্ত্রম্।’ অর্থাৎ কল্প হল বেদবিহিত কর্মের নিয়মানুসারী ব্যবস্থা বিধায়ক শাস্ত্র। এ কল্পসূত্র প্রধানত দুই প্রকার- শ্রৌতসূত্র এবং গৃহ্যসূত্র। এ দুটি ভাগের মধ্যে আবার দুটি করে ভাগ নিহিত আছে। শ্রৌতসূত্রের সাথে আছে যজ্ঞের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শুল্বসূত্র এবং গৃহ্যসূত্রের সাথে যুক্ত আছে ধর্মসূত্র। এভাবে আমরা চার প্রকার কল্পসূত্র পাই: ১. গৃহ্যসূত্র, ২.ধর্মসূত্র, ৩.শ্রৌতসূত্র এবং ৪.শুল্বসূত্র।

প্রত্যেক বেদেরও পৃথক পৃথক কল্পসূত্র আছে। প্রাচীনকালে বেদের যতগুলো শাখা ছিল, ঠিক ততগুলিই কল্পসূত্র ছিল। প্রাচীন উৎস থেকে জানা যায়, পূর্বে কল্পসূত্র ছিল ১১৩০টি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমানে এতগুলো কল্পসূত্র পাওয়া যায় না। বর্তমানে পাওয়া যায় প্রায় ৫০টি কল্পসূত্র। নিম্নে তাদের তালিকা দেয়া হল:

ঋগ্বেদ
শ্রৌতসূত্র : ১. আশ্বলায়ন ২. শাংখায়ন ৩. পরশুরাম
গৃহ্যসূত্র : ১.আশ্বলায়ন, ২.শাংখায়ন
ধর্মসূত্র : ১. বশিষ্ঠ

সামবেদ
শ্রৌতসূত্র : ১. লাট্যায়ন বা আর্ষেয়কল্প, ২.দ্রাক্ষ্যায়ন, ৩.জৈমিনীয়
গৃহ্যসূত্র : ১.গোভিল, ২. দ্রাক্ষ্যায়ন,৩.জৈমিনীয়,
৪. খাদির
ধর্মসূত্র : ১.গৌতম

কৃষ্ণযজুর্বেদ
শ্রৌতসূত্র : ১.বৌধায়ন, ২.আপস্তম্ব, ৩. মানব, 
৪.সত্যাষাঢ় বা হিরণ্যকেশী, ৫.বৈখানস
গৃহ্যসূত্র : ১.বৌধায়ন, ২. আপস্তম্ব, ৩.মানব, ৪.হিরণ্যকেশী, ৫. ভারদ্বাজ, ৬.বারাহ, ৭. কাঠক, ৮. লৌগাক্ষি, ৯.বৈখানস, ১০.বাধুল
ধর্মসূত্র : ১. মানব, ২. বৌধায়ন, ৩. আপস্তম্ব, ৪.হিরণ্যকেশী, ৫. বৈখানস
শুল্বসূত্র : ১.বৌধায়ন, ২. আপস্তম্ব, ৩. হিরণ্যকেশী ৪. কাঠক, ৫. মানব, ৬. বারাহ

শুক্লযজুর্বেদ
শ্রৌতসূত্র : ১.কাত্যায়ন
গৃহ্যসূত্র : ১.পারস্কর বা বাজসনেয়
ধর্মসূত্র : ১.শঙ্খ, ২.লিখিত
শুল্বসূত্র : ১. কাত্যায়ন

অথর্ববেদ
শ্রৌতসূত্র : ১.বৈতান
গৃহ্যসূত্র : ১. কৌশিক
ধর্মসূত্র : ১.পঠিনসী

ঋগ্বেদ, সামবেদ, শুক্লযজুর্বেদ, কৃষ্ণযজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ এ পাঁচপ্রকারের প্রত্যেকের অন্তর্ভুক্ত সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ নিয়ে সমগ্র বেদবিদ্যা। এর মধ্যে শুধু অথর্ববেদের কোন আরণ্যক নেই। সমগ্র বেদবিদ্যাকে যদি জ্ঞানরাজ্যের একটি তালা রূপে কল্পনা করা হয় তবে সেই তালা খুলতে ছয়টি চাবির প্রয়োজন। অন্য সাধারণ তালা থেকে এর পার্থক্য, এ তালা খুলতে একই সাথে ছয়টি চাবির প্রয়োজন। কোন একটি চাবি বাদ পড়লে তালাকে খোলা যাবে না। এ ছয়টি চাবিই হল বেদের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত 'ষড়বেদাঙ্গ'। শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ব্যাকরণ, ছন্দ, জ্যোতিষ। অথর্ববেদীয় মুণ্ডক উপনিষদে বেদাঙ্গ সহ বেদবিদ্যার একটি তালিকা দেয়া আছে।

“তত্রাপরা ঋগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদঃ অথর্ববেদঃ শিক্ষা কল্পো ব্যাকরণং নিরুক্তং ছন্দোজ্যোতিষমিতি।” 
(মুণ্ডক উপনিষদ: ০১.০১.০৫)

"অপরা বিদ্যা ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, শিক্ষা, কল্প ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ এবং জ্যোতিষ এ দশটি।"

১. শিক্ষা :
বেদে ধ্বনিতত্ত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেবার কারণে ধ্বনিতত্ত্বকে আলোচনার মাধ্যমেই প্রথম বেদাঙ্গ শিক্ষা শুরু হয়। যে শাস্ত্রে বর্ণ, স্বর, মাত্রা ইত্যাদির যথাযথ উচ্চারণ ও প্রয়োজনবিধি লিপিবদ্ধ আছে, তাকে শিক্ষা বলে। প্রত্যেক বেদের সাথে শিক্ষা যুক্ত আছে। যথা- 

ঋগ্বেদ : পাণিনীয় শিক্ষা
সামবেদ : নারদীয় শিক্ষা 
যজুর্বেদ : যাজ্ঞবল্ক্য শিক্ষা 
অথর্ববেদ : মাণ্ডূকী শিক্ষা 

২. কল্প : বেদাঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হলেও কল্পসূত্রগুলো মূল বেদের সাথে এমনভাবে যুক্ত যে চার প্রকার (ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ) বেদের সাথে সে অচ্ছেদ্য হয়ে গেছে। তাই পূর্বে চার প্রকার বেদের সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদের তালিকার সাথে সাথে চার প্রকার কল্পসূত্রেরও তালিকা দেওয়া হয়েছে এবং কল্প সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা সেখানেই করা হয়েছে। তবুও আমরা চার প্রকার সূত্রের নাম দিয়ে দিচ্ছি।

শ্রৌতসূত্র : যাগযজ্ঞ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিধি-ব্যবস্থা সংক্রান্ত সূত্র।

গূহ্যসূত্র : এ সূত্রগুলোকে আমরা এক কথায় বলতে পারি, পারিবারিক আইন; অর্থাৎ একজন মানুষের পরিবারে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত করণীয় এবং অকরণীয় সকল কর্তব্যই এখানে দেয়া আছে।

ধর্মসূত্র : ধর্ম, রাষ্ট্র, সমাজনিষ্ঠ নাগরিক জীবনের কর্তব্য। এতে ধর্ম সম্বন্ধীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ উভয় প্রকার বিধিনিষেধাদি সুসংবদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ আছে।

শুল্বসূত্র : শুধুমাত্র যজুর্বেদেরই শুল্বসূত্র পাওয়া যায়। যজুর্বেদ যেহেতু যজ্ঞসম্বন্ধীয়, তাই যজ্ঞবেদির নির্মাণে শূল্বসূত্রের একান্ত প্রয়োজন। শুল্ব অর্থ পরিমাপ। বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞবেদি নির্মাণে এ পরিমাপ একান্ত প্রয়োজনীয়। শুল্বসূত্রকে পৃথিবীর প্রাচীনতম জ্যামিতির নিদর্শন বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভাবতে অবাক লাগে ইউক্লিড, থ্যালিস, পিথাগোরাসের বহু পূর্বে আমাদের দেশের ঋষিরা কত অসাধারণভাবে জ্যামিতি বিজ্ঞানের চর্চা করেছেন।

৩. নিরুক্ত: ‘নির্ঘণ্টু’ নামক পঞ্চ অধ্যায়ে বিভক্ত কোষ গ্রন্থই নিরুক্তের প্রাচীনতম উৎস। এ কোষ গ্রন্থটি অজানা কোন এক ঋষি প্রণীত। এ নির্ঘণ্টু নামক ১,৭৭১টি শব্দতালিকার উপরেই যাস্ক মুনি একটি ব্যাখ্যামূলক কোষগ্রন্থ রচনা করেন; তাকেই বলে  নিরুক্ত। নিঃশেষরূপে পদসমূহ এতে উক্ত হয়েছে বলে একে নিরুক্ত বলে। ‘নির্ঘণ্টু’ এবং যাস্কমুনি রচিত এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ  নিরুক্তই পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন অভিধানকোষ। নিরুক্ত তিনটি ভাগে বিভক্ত:
১. নৈর্ঘণ্টুকাণ্ড 
২.নৈগম কাণ্ড ও 
৩. দৈবত কাণ্ড

৪. ব্যাকরণ: কোন একটি ভাষার ভিত্তিসৌধ রচিত হয় সেইভাষার ব্যাকরণের উপর। বেদের ন্যায় প্রাচীনতম ভাষার ক্ষেত্রে এ কথাটি সর্বাংশে সত্য। একারণে পাণিনীয় শিক্ষায় ব্যাকরণকে বেদের মুখ বলা হয়েছে। বি-আ-কৃ+অনট্= ব্যাকরণ। তাই ব্যাকরণ শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ- ব্যাকৃত করা, প্রকাশিত করা, ছড়িয়ে দেয়া। বেদবিদ্যাকে প্রকাশিত করার জন্য ব্যাকরণবিহীন অসম্ভব। এ কারণে মহর্ষি পতঞ্জলির মহাভাষ্যে ব্যাকরণের প্রয়োজন বোঝানোর জন্য কাত্যায়ণ বররুচির একটি বার্ত্তিক উল্লেখ করা হয়েছে:
"রক্ষোহাগমলঘ্বসন্দেহাঃ প্রয়োজনম্।"
(মহাভাষ্য: পস্পশা আহ্নিক, ০৪)

অর্থাৎ রক্ষা, ঊহ, আগম, লঘু এবং অসন্দেহ- এ পাঁচটি বিষয় যথাযথভাবে অনুধাবনের জন্য ব্যাকরণের প্রয়োজন।

রক্ষা : বেদের রক্ষার জন্য ব্যাকরণের প্রয়োজন। প্রকৃতি, প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস, বর্ণের লোপ, বর্ণের আগম, বর্ণবিকার সম্বন্ধে যিনি সঠিকভাবে জানেন; তিনিই বিশুদ্ধভাবে বেদের জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। এবং বৈদিক জ্ঞান লাভ করে বিশুদ্ধ বেদবিদ্যার ধারাকে রক্ষা করতে পারবেন।

ঊহ: সঠিক বিচার করে পরিবর্তন। কারণ বেদে সমস্ত লিঙ্গ এবং সমস্ত বিভক্তিতে মন্ত্রগুলি পঠিত হয়নি। যিনি যজ্ঞ করবেন, তাঁর প্রধান কর্তব্য সঠিক ব্যাকরণ জ্ঞানের মাধ্যমে তিনি যজ্ঞের প্রয়োজন অনুযায়ী মন্ত্রগুলির যথাযথ পরিবর্তন সাধন করে যজ্ঞকর্ম নিষ্পন্ন করবেন।

আগম : কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত না হয়ে ষড়বেদাঙ্গসহ বেদ অধ্যয়ন করা এবং অবগত হওয়া জ্ঞানী ব্যক্তির কর্তব্য। অর্থাৎ নিষ্কামভাবে বেদবিদ্যাকে ভালবেসে সঠিক বেদবিদ্যার চর্চার জন্যও ব্যাকরণের প্রয়োজন।

লঘু: লঘু অর্থ সংক্ষেপ।  ভাষাকে সহজ এবং সংক্ষিপ্ত করার জন্যও ব্যাকরণ অধ্যয়ন করা উচিত। বেদজ্ঞকে সঠিক বেদজ্ঞানের জন্য অসংখ্য শব্দ জানতে হবে। কারণ শব্দজ্ঞানবিহীন ব্যক্তি বেদরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই ব্যাকরণই একমাত্র সহজতর এবং সংক্ষেপতম উপায় যথার্থ শব্দ জ্ঞান লাভের।

অসন্দেহ: বেদমন্ত্রের সন্দেহ নিবারণের জন্যও ব্যাকরণ অধ্যয়ন করা উচিত।

এ পাঁচটি প্রধান প্রয়োজনের অতিরিক্ত মহর্ষি পতঞ্জলি (খ্রি. পূ. দ্বিতীয় শতক) শব্দানুশাসনের অর্থাৎ ব্যাকরণের আরও ১৩টি প্রয়োজনের কথা বলেছেন। এ প্রয়োজনগুলো হল:
১. তেহসুরাঃ, ২.দুষ্টঃ শব্দঃ, ৩. যদধীতম্, ৪.যস্তু প্রযুঙক্তে, ৫. অবিদ্বাংসঃ, ৬.বিভক্তিং কুর্বন্তি, ৭.যো বা ইমাম্, ৮. চত্বারি, ৯. উত ত্বঃ, ১০. সক্তুমিব, ১১. সারস্বতীম্, ১২. দশম্যাং পুত্রস্য, ১৩. সুদেবো অসি বরুণ।

৫. ছন্দ: বেদমন্ত্রের জন্য ছন্দের জ্ঞান অপরিহার্য। কারণ চারবেদের অধিকাংশ মন্ত্রই ছন্দোবদ্ধভাবে রচিত। বৈদিক ছন্দ সাতটি। গায়ত্রী, উষ্ণিক্, অনুষ্টুপ, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ, জগতী। বৈদিক ছন্দকে অক্ষরছন্দ বলা হয়। কারণ মন্ত্রের অক্ষরের সংখ্যা গুণে গুণে নির্ণয় করতে হয়। অক্ষর বলতে কোনবর্ণ নয়, শব্দ উচ্চারণের স্বল্পতম প্রয়াসকে বোঝানো হয়। যাকে আমরা ইংরেজিতে 'Syllable' বলি। গায়ত্রী ছন্দে অক্ষরের সংখ্যা ২৪টি, উষ্ণিক ছন্দে ২৮টি, অনুষ্টুপ ছন্দে ৩২টি, বৃহতী ছন্দে ৩৬টি, পঙক্তি ছন্দে ৪০টি, ত্রিষ্টুপ ছন্দে ৪৪টি এবং সর্বশেষে জগতী ছন্দে অক্ষরের সংখ্যা ৪৮টি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অসাধারণ গাণিতিক বিন্যাসে বৈদিক ছন্দের উদ্ভব।  গায়ত্রী থেকে জগতী পর্যন্ত প্রত্যেকটি ছন্দে পর্যায়ক্রমে চারটি করে অক্ষরের বৃদ্ধি ঘটেছে। ছন্দের অত্যন্ত  প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ঋষি কাত্যায়ন বলেছেন,  “যিনি ঋষি ছন্দ দেবতা ও মন্ত্রের বিনিয়োগ না জেনে মন্ত্রের দ্বারা যাগ করেন বা অধ্যয়ন-অধ্যাপন করেন, তিনি কাঠের গুঁড়ির মত কেবল ভারবাহী হন অথবা গর্তে পতিত হয়ে পাপে আচ্ছন্ন হন (কাত্যায়ন: ১.১)।” একারণেই ছন্দ জানার জন্য ছন্দোগ্রন্থের প্রয়োজন। ছন্দ সম্পর্কে যাস্কের নিরুক্তে বলা হয়েছে,
 "ছন্দাংসি চ্ছাদনাৎ (৭.১২)।"আচ্ছাদন করে বলে তাকে ছন্দ বলে। কি থেকে আচ্ছাদন? পাপ থেকে আচ্ছাদন। অর্থাৎ যা মৃত্যু থেকে রক্ষা করে অমৃতে নিয়ে যায় তাই ছন্দ। পূর্বে হয়ত একাধিক ছন্দোগ্রন্থ ছিল;  কিন্তু বর্তমানে একমাত্র ঋষি পিঙ্গল রচিত ‘পিঙ্গলছন্দসূত্র’ই একমাত্র বিদ্যমান। পিঙ্গলছন্দসূত্রের উপর হলায়ুধ ভট্টের বৃত্তি অনন্য।

৬. জ্যোতিষ: ষড়বেদাঙ্গের সর্বশেষ জ্যোতিষ। এ জ্যোতিষ বর্তমানে প্রচলিত হস্তরেখা বিদ্যা নয়। এ হল নক্ষত্রবিদ্যা। যাকে আমরা ইংরেজিতে বলতে পারি ‘Vedic Astronomy’। সে যুগে বর্তমান কালের মত ঘরে ঘরে ক্যালেন্ডার ছিল না, কিন্তু সে সময়েও তিথি-নক্ষত্রের হিসাব রাখতে হত। শ্রৌতশাস্ত্রগুলোর মধ্যে দেখা যায় অধিকাংশ যজ্ঞেরই তিথি নক্ষত্র এবং ঋতু উল্লেখ করে দেয়া আছে। অর্থাৎ কখন এ যজ্ঞকর্মটি করতে হবে। যেমন শতপথ ব্রাহ্মণে যে ‘দশপূর্ণমাস’ নামক যজ্ঞের কথা বলা আছে তা অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত করতে হয়। তাই কেউ যদি কখন অমাবস্যা এবং কখন পূর্ণিমা তা না জানেন; তাহলে সে যজ্ঞ কর্ম কখনই সমাধা করতে পারবেন না। এ কারণেই তৈত্তিরীয় আরণ্যকে বলা হয়েছে, যজ্ঞকাল সিদ্ধির জন্য জ্যোতিষের প্রয়োজন। বৈদিক জ্যোতিষের বিভিন্ন তত্ত্বের উল্লেখ পাই আমরা ঋগ্বেদের কিছু মন্ত্রে এবং শতপথব্রাহ্মণে। বৈদিক জ্যোতিষের দুটি গ্রন্থ পাওয়া যায়-একটি ঋগ্বেদীয়,এতে আছে ৩৬টি শ্লোক এবং অন্যটি যজুর্বেদীয়, এতে আছে ৪৩টি শ্লোক। এ গ্রন্থদুটিতে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নে চন্দ্রসূর্যের অবস্থান অমাবস্যা, পূর্ণিমাতিথি এবং নক্ষত্রমণ্ডল ইত্যাদি বিবিধ বৈজ্ঞানিক বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ  আলোচনা আছে।

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 
সহকারী অধ্যাপক, 
সংস্কৃত বিভাগ, 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Post a Comment

0 Comments