ভালো ঘুমের জন্য রাতে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। পুষ্টিবিদরা জানান, দুধে সব ধরনের মিনারেলই পরিমিত পরিমাণে থাকে। তাই ঘুমও ভালো হয়। দুধে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এতেই শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন শরীর শান্ত করে, ফলে ঘুম ভালো হয়। শরীর গঠনের জন্য দুধের প্রয়োজনীয় অপরিসীম। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ বিষয়টি মহাভারতেও পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, কেউ যদি দীর্ঘায়ু লাভ করতে ইচ্ছা করে তবে সে নিয়মিত দুগ্ধ পান করবে। যদি নিয়মিত করার সামর্থ্য না থাকে, তবে অন্ততপক্ষে মাসের মধ্যে তিন দিন ঈষদুষ্ণ দুগ্ধ পান করবে।
ন গর্ব্বেণ ভবেৎ প্রাজ্ঞঃ কদাচিদপি মানবঃ।
দীর্ঘমাঘুরথেচ্ছন্ হি ত্রিরাত্রঞ্চোষ্ণপো ভবেৎ।।
(মহাভারত:শান্তিপর্ব, ৩৬.৯)
"বুদ্ধিমান মানুষ কখনও গর্বিত হবে না এবং দীর্ঘায়ু লাভ করতে ইচ্ছা করলে অন্ততপক্ষে মাসের মধ্যে তিন দিন ঈষদুষ্ণ দুগ্ধ পান করবে।"

গরুর দুধ ভারতবর্ষের সংস্কৃতিতে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। পূজা-পার্বণাদিসহ সকল ধর্মীয় মাঙ্গলিক কর্মে গরুর দুধ ব্যবহৃত হয়। শিবমূর্তির অভিষেকসহ সকল দেবতাদের অভিষেকে দুধ অত্যাবশ্যক।পুষ্টিকর দুধ সম্পর্কে অথর্ববেদ সংহিতায় বলা হয়েছে:
পুষ্টি পশুনাং পরি জগ্রভাহং
চতুষ্পদাং দ্বিপদাং যচ্চ ধান্যম্।
পয়ঃ পশুনাংরসমোষ ধীনাং
বৃহস্পতিঃ সবিতা মে নি যাচ্ছাৎ।।
(অথর্ব্ববেদ সংহিতা: ১৯.৪.৫.৫)
"চতুষ্পদ পশু, দ্বিপদ পশু এবং ধান হতে আমরা পুষ্টি গ্রহণ করি। উদুম্বর মণির তেজের দ্বারা সকলের অনুজ্ঞাতা বৃহস্পতিদেব আমাদেরকে পশুর দুগ্ধ ও ঔষুধির রস প্রদান করেছেন।"
ছোটবেলায় মনে আছে, গরুর দুধ খাওয়ার পড়ে গ্লাসে জল দিয়ে খেতে হত। গৃহের অবিভাবকেরা বলতেন যে, দুধ খাওয়ার পরে যদি সেই গ্লাসে জল না খেলে দুধে কোন উপকার হবে না, বড় হওয়া যাবে না। আমরাও তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার চিন্তায় দুধের গ্লাসে জল দিয়ে খেতাম। এখন বুঝি যে কেন গৃহের অবিভাবকেরা শিশুদের এ কথাগুলো বলতেন। একবিন্দু দুধও যেন পরিত্যক্ত না হয়, তাই কথাগুলো পরিবারে শিশুদের শিশুকাল থেকেই শিখানো হত। দুধ খাওয়ার পরে গ্লাসে জল দিয়ে খেলে গ্লাসের সকল দুধই খাওয়া হয়ে যায়।
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
0 Comments