দেবী সরস্বতীই, বেদমাতা গায়ত্রী

পরমেশ্বরের সৃষ্টিকর্তারূপ ব্রাহ্মারই স্ত্রীরূপ শক্তির নাম ব্রহ্মাণী। এ ব্রহ্মাণীরই আরেক নাম সরস্বতী। দেবী সরস্বতীই গায়ত্রী মন্ত্রের অধিষ্ঠাত্রী গায়ত্রী বা সাবিত্রী। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নিত্য যে গায়ত্রী মন্ত্রের জপের মাধ্যমে নিত্য দেবী সরস্বতীকেই আহ্বান করে। বুদ্ধিরূপা দেবী সরস্বতীকে আহ্বান করে তাঁর উদ্দেশ্যে সুপথে চলার প্রার্থনা জানায়। কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের দশম প্রপাঠকের মহানারায়ণ উপনিষদে গায়ত্রী সন্ধ্যাপদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। সেই গায়ত্রী সন্ধ্যাপদ্ধতির শুরুতেই দেবী গায়ত্রীর আহ্বান রয়েছে। সেখানে সুস্পষ্টভাবে দেবী সরস্বতীকেই গায়ত্রীরূপে আহ্বান করা হয়েছে। সর্বাত্মক পরব্রহ্মপ্রাপ্তিতে এ ব্রহ্মাণী বা সরস্বতীরূপা গায়ত্রী মন্ত্রের  বিনিয়োগ হয়।


আয়াতু বরদা দেবী অক্ষরং ব্রহ্মসম্মিতম্।

 গায়ত্রী ছন্দসাং মাতা ইদং ব্রহ্ম জুষস্ব নঃ ॥

যদহ্নাৎকুরুতে পাপং তদহ্নাৎ প্রতিমুচ্যতে।

যদ্রাত্রিয়াৎ কুরুতে পাপং তদ্রাত্রিয়াৎ প্রতিমুচ্যতে । সর্ববৰ্ণে মহাদেবি সন্ধ্যাবিদ্যে সরস্বতি ।।

(মহানারায়ণ উপনিষদ: অনুবাক, ৩৪)


"আমাদের অভীষ্টবরপ্রদা গায়ত্রীছন্দ অভিমানিনী দেবতা বিনাশরহিত। বেদান্ত প্রমাণদ্বারা সম্যগ নিশ্চিত, পরব্রহ্মতত্ত্বকে লক্ষ্য করে আমাদেরকে ব্রহ্মতত্ত্ব বুদ্ধিগত করার জন্য আগমন করুন। বেদমাতা গায়ত্রী আমাকে এই বেদান্ত প্রতিপাদ্য ব্রহ্মতত্ত্ব উপদেশ করুন। হে প্রাত-সায়ংসন্ধিত্বে উৎপন্নে, হে অনুষ্ঠানরূপে, হে সরস্বতি, যে দিন তোমার ভক্ত পাপ কর্ম করে, সে দিনই তাকে পাপ হতে বিমুক্ত করে থাক। আরও তোমার ভক্ত যে রাত্রিতে পাপাচরণ করে, সেই রাত্রিতেই তাকে পাপ মুক্ত কর। হে সর্ববর্ণরূপে, হে মহাদেবি, হে সন্ধ্যাবিদ্যে, হে সরস্বতি, তুমি আমাকে পাপ কর্ম হতে নিবৃত্ত কর। "


বেদমন্ত্রে গায়ত্রী, সাবিত্রী, সরস্বতী ও শ্রীকে একসাথে গায়ত্রী সন্ধ্যামন্ত্রে আহ্বান করা হয়েছে। এঁরা কোন স্বতন্ত্র দেবী সত্ত্বা নয়। এক পরমেশ্বরেরই বিদ্যা এবং বুদ্ধিরূপা আদ্যাশক্তি মহামায়া। 


ওজোঽসি সহোঽসি বলমসি ভ্রাজোঽসি 

দেবানাং ধামনামাসি বিশ্বমসি ৷ 

বিশ্বায়ুঃ সর্বমসি সর্বায়ুরভিভূরোম্ ৷৷ 

গায়ত্ৰীমাবাহয়ামি সাবিত্রীমাবাহয়ামি সরস্বতীমাবাহয়ামি।।

(মহানারায়ণ উপনিষদ: অনুবাক,৩৫)


"হে গায়ত্রি, বলহেতু ওজোধাতুস্বরূপা, তুমি সমস্ত শত্রুকে পরাজয় করতে সমর্থা। তুমি দীপ্তিরূপা, তুমি ইন্দ্রাদিদেবগণের তেজোধাম। তুমি সমস্ত জগৎরূপ, সম্পূর্ণ আয়ুস্বরূপ, সর্বরূপ ও সর্ব আয়ুরূপা, সর্বপাপের নিরাকরণহেতু ও প্রণব প্রতিপাদ্য পরমাত্মস্বরূপা। এমন গায়ত্রী, সাবিত্রী, সরস্বতী, ছন্দর্ষিগণ ও শ্রীকে আবাহন করি।"


কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 

সহকারী অধ্যাপক, 

সংস্কৃত বিভাগ, 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Post a Comment

0 Comments